মানবাধিকার রক্ষায় স্বোচ্চার দেশগুলোই মিয়ানমারে বিনিয়োগ করছে বলে অভিযোগ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। তিনি মিয়ানমারে বিপুল বিনিয়োগ করা দেশগুলোকে রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে নিজেদের স্বার্থে এবং নিজ বিনিয়োগ রক্ষায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে ‘রোহিঙ্গা রিপ্যাট্রিয়েশন: আ পাথওয়ে টু পিস, স্ট্যাবিলিটি এন্ড হারমোনি ইন দ্য বে অব বেঙ্গল রিজিয়ন’- শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে ডিপ্লোম্যাটস ম্যাগাজিন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এ অভিযোগ করেন।
সেমিনারটি পরিচালনা করেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. মাহফুজুর রহমান এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. ওবায়দুল হক। সেমিনারে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও প্রকাশনার নির্বাহী উপদেষ্টা আবুল হাসান চৌধুরী, প্রকাশনার নির্বাহী সম্পাদক নাজিনুর রহিম, গ্যারেথ জন ইভান্স, অধ্যাপক মাইকেল ডব্লিউ চার্নি, মেজর জেনারেল (অব.) মো. নাঈম আশফাক চৌধুরী বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।
ড. মোমেন বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন এশিয়া প্যাসিফিক ও বে অব বেঙ্গলের প্রতি অনেক দেশের আকর্ষণ বেড়েছে এবং প্রত্যেকে এখানে অনেক বিনিয়োগ করেছে ও ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াচ্ছে। এই সমস্যার সমাধান না হলে এবং এখানে সন্ত্রাসী তৎপরতা বাড়লে এই বিনিয়োগগুলো ভেস্তে যাবে। হতাশাগ্রস্ত রোহিঙ্গারা যদি সন্ত্রাসবাদে অনুরক্ত হয় তাহলে গোটা অঞ্চলে বড় বড় কিছু দেশের করা বিনিয়োগ ভেস্তে যাবে। বিনিয়োগ টিকিয়ে রাখতে এ অঞ্চলে শান্তি প্রয়োজন।’
সেমিনারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমারের বিনিয়োগ এবং বৈদেশিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগের চিত্র তুলে ধরেন। ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগ করা দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে সিঙ্গাপুর। এ ছাড়া চীন, হংকং, জাপান, থাইল্যান্ড দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, ফ্রান্স ও ভিয়েতনামের বিনিয়োগের চিত্র তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আর এ সব বিনিয়োগগুলো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যদি প্রতিশ্রুতি থাকে, যদি আন্তরিকতা থাকে, তাহলে নিশ্চয় রোহিঙ্গা সঙ্কট দূর হবে। এই প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে আমাদের বৈশ্বিক নেতৃত্বের আন্তরিকতার ঘাটতি রয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত এ বিষয়ে তারা শুধু মুখে মুখে আশ্বাস দেয়।
ড. মোমেন বলেন, ‘তবে আমরা সর্বদা আশাবাদী এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয়ই রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য সিনিয়র পর্যায়ের ফোকাল (এনভয়) পয়েন্টে নিযুক্ত রয়েছে। এগুলো ভাল খবর। আমরা আলোচনা ও পর্যালোচনার মাধ্যমে এই সমস্যাটি বন্ধুত্বপূর্ণভাবে সমাধান করতে চাই।’ শুধু আশ্বাসের পরিবর্তে বিশ্ব নেতৃত্বকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘তাদের আন্তরিকতা ও অঙ্গীকার নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের আশাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। উন্নত জীবন ও ভবিষ্যতের জন্য রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে। আমি আশা করি এটা একদিন হবে।’
সেমিনারে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমারে কোন সরকার ক্ষমতায় তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। সেখানে সামরিক শাসক থাকুক আর গণতান্ত্রিক শাসক থাকুক, তা দেখার বিষয় নয়। মূল বিষয় তাদের সদিচ্ছা। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বিশ্বের ১৩৪টি দেশ জাতিসংঘে বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়েছে।’
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এ সামরিক সরকার কখনই রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে না। প্রত্যাবাসনের জন্য একটি তারিখ নির্ধারণ করে দিতে হবে।’
সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও প্রকাশনার নির্বাহী উপদেষ্টা আবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘এটি শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয় বা আঞ্চলিক সমস্যাও নয়। এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এটির সমাধান না হলে সবাইকে ভুগতে হবে।’
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. ওবায়দুল হক বলেন, ‘এ সংকটের একমাত্র দীর্ঘমেয়াদী সমাধান হচ্ছে প্রত্যাবাসন। তবে এ প্রত্যাবাসন হতে হবে স্বেচ্ছায়, নিরাপদে, সন্মানের সঙ্গে।’
আর সেমিনারে রোহিঙ্গা নিয়ে একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুচিতা শারমিন। রোহিঙ্গাদের নিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সমন্বিত কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেন তিনি।
পাঠকের মতামত